Advertisement
ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার:
আজ থেকে ১৩৪ বছর আগে ১৮৯১ সালে আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ে বাংলার পূর্বদিকে প্রথমবারের মতো রেলপথ নির্মাণকাজ শুরু করে। ১৮৯৬ সালে আখাউড়া-কুলাউড়া-শাহবাজপুর-মহিষাধন (করিমগঞ্জ, ভারত) রেলপথের কাজ শেষ হয়। আর কুলাউড়া থেকে সিলেট পর্যন্ত রেলপথটি ১৯১৫ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালে ব্রিটিশ সরকারের অধীনে আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ে কর্তৃক নির্মাণ করা হয়।
এরপর ধীরে ধীরে এই অঞ্চলে রেলযোগাযোগ স্থাপন হয়। ওই সময়েই আখাউড়া থেকে সিলেট পর্যন্ত রেলওয়ে স্টেশনের বাইরে পাহাড়ি অংশে জরুরি প্রয়োজনে রেললাইন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিযুক্ত করা হয় ‘ওয়েম্যান’ নামের শ্রমিকদের। তাদের বসবাসের জন্য রেলওয়ের ভূমিতে নির্মাণ করা হয় ৬-৭ কক্ষের কোয়ার্টার। রেলওয়ের ভাষায় এসব কোয়ার্টারের নাম ‘গ্যাং হাট’। বর্তমানে রেলওয়েতে ওয়েম্যান পদ থাকলেও কালের পরিক্রমায় জরাজীর্ণ হয়ে গেছে তাদের বসবাসের জন্য নির্মিত শতবর্ষী ‘গ্যাং হাট’ নামের কোয়ার্টারগুলো। কোনো কোনোটির অস্তিত্বই নেই।
আখাউড়া-সিলেট রেল সেকশনের অনেকগুলো গ্যাং হাটের মধ্যে অন্যতম মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশনের পূর্বদিকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের প্রবেশমুখটি। এটির বেহাল অবস্থা এখনও দৃশ্যমান। সরেজমিন দেখা গেছে, এ কোয়ার্টারের কোনো দরজা-জানালা নেই। কোয়ার্টারের চারপাশে জমেছে গাছপালা। আশপাশে কোনো বসতি না থাকায় পরিত্যক্ত এ কোয়ার্টারে কেউ আর যাতায়াত করে না। এটি যেন একটি ভুতুড়ে বাড়ি।
শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘১৮৯৬ সালে আখাউড়া-কুলাউড়া-শাহবাজপুর-ভারতের মহিষাধন রেলপথের কাজ সম্পন্ন হয়। সেসময় আখাউড়া থেকে সিলেট পর্যন্ত স্টিম (কয়লা) ইঞ্জিনের স্বল্পগতির লোকাল যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন চলাচল করত। পাহাড়ি এলাকায় রেললাইনের ওপর প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ধস ছিল অনেকটা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এ ছাড়া রেললাইন নষ্ট, লাইনের ক্লিপ খুলে যাওয়া ইত্যাদি ঘটনায় দ্রুতগতিতে বা জরুরি প্রয়োজনে রেললাইন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তৎকালীন রেল কর্তৃপক্ষ নিযুক্ত করে শ্রমিকদের। রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের তত্ত্বাবধানে থাকা এসব শ্রমিককে বলা হয় ‘ওয়েম্যান’।
তিনি আরও জানান, শ্রমিকদের পরিবারসহ বসবাসের জন্য সারা দেশে পাহাড়ি এলাকায় রেললাইনের পাশেই তৈরি করা হয় অসংখ্য কোয়ার্টার। রেলওয়ের ভাষায় শ্রমিক কোয়ার্টারগুলোর নাম হলো ‘গ্যাং হাট’। এখন পরিস্থিতি অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে রেললাইনের পাশের পাহাড়ধসসহ কোনো কারণে রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হলে স্টেশন এলাকা থেকে দ্রুতগতিতে ইঞ্জিনচালিত ট্রলিযোগে সহজে যাওয়া যায়। ফলে বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়েতে ‘ওয়েম্যান’ বা শ্রমিক পদ থাকলেও কালের পরিক্রমায় ধ্বংস হয়ে গেছে তাদের বসবাসের জন্য নির্মিত শতবর্ষী ‘গ্যাং হাট’ নামের কোয়ার্টারগুলো। কোনো কোনো গ্যাং হাটের কোনো অস্তিত্বই অবশিষ্ট নেই। যেগুলো কোনোমতে দাঁড়িয়ে আছে, সেগুলো অত্যন্ত জরাজীর্ণ ও পরিত্যক্ত। এখন এগুলো সংস্কার বা সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেই।