lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
শনিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
Last Updated 2025-02-08T10:00:30Z
ব্রেকিং নিউজ

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হরিবলের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ অনিশ্চিত

Advertisement


 


ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার:

মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা (এসএসসি) ও উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষায় (এইচএসসি) জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৯ নম্বর সাতগাঁও ইউনিয়নের হুগলিছড়া চা বাগানের দরিদ্র শ্রমিক অনিল বোনার্জীর ছেলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী (জন্মান্ধ) হরিবল বোনার্জী। মনে সুপ্ত বাসনা ও স্বপ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে চাকরীর মাধ্যমে দরিদ্র পরিবারের হাল ধরবেন। কিন্তু যাতায়াত খরচ, থাকা-খাওয়া ও শ্রæতিলেখকের সম্মানি সংগ্রহ করতে না পারায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তার। দরিদ্র পরিবার ঋণের জন্য এখন ঘুরছেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) কর্মকর্তাদের দ্বারে-দ্বারে। এখনো ঋণের ব্যবস্থা করা যায়নি। ফলে অতিদরিদ্র পরিবারটি তাকিয়ে আছে মানুষের সহায্য-সহযোগিতার দিকে।

এ ব্যাপারে হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান হরিবল বোনার্জী বলেন, ‘আমার জীবনের গল্পটা অনেক করুণ। ২০০৮ সালে আমার পরিবার আমাকে প্রাইমারিতে ভর্তি করে। সে সময়ে আমি পড়াশোনা যে করতে পারবো তার নিশ্চয়তা ছিল না। ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচির মাধ্যমে আমাকে ভর্তি করা হয়। ব্র্যাকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের যে পদ্ধতি অর্থাৎ ব্রেইল পদ্ধতি ছিল না। সে কারনে ভর্তির পর তিন বছর আমি লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত হই। ২০১২ সালে মূলত আমার আনুষ্ঠানিক পড়ালেখায় হাতেখড়ি হয়। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত পিএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪ দশমিক ৮৩ পেয়ে উত্তীর্ণ হই এবং সাধারণ বৃত্তি লাভ করি। তারপর ২০১৭ সালে মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হই। সেখান থেকে ২০১৯ সালে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪ দশমিক ৮৬ পেয়ে উত্তীর্ণ হই এবং ২০২২ সালে একই প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হই। পরবর্তীতে আমি মৌলভীবাজার সমন্বিত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় মৌলভীবাজার সরকারি কলেজে ভর্তি হয়ে পড়াশুনা করি এবং সেখান থেকে ২০২৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষায়ও জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হই। আমি ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে চাই। কিন্তু আমার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে টাকা। আমাদের পরিবারে ‘নুন আনতে পান্তা পুরোয়’। এ অবস্থায় আমার স্বপ্ন পূরণে বিত্তবানরা এগিয়ে এলে বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারব।’

হরিবলের বোনার্জীর হতদরিদ্র অনিল বোনার্জী বলেন, ‘আমি হুগলিছড়া চা বাগানের একজন দরিদ্র চা শ্রমিক। আমার ছেলে ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়া চালিয়ে অনেক চেষ্টা করছে। আমারে কইছে (বলছে) বাবা আমি লেখাপড়া করব। তখন আমি জানি না এতটুক লেখাপড়া করতে পারবে, কিভাবে করবে। ছোটবেলা থেকেই মানুষের সাহায্য-সহযোগিতায় আমার ছেলেটা লেখাপড়া শিখেছে। এবার আমার ছেলে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চায়। কিন্তু টাকার কারনে হয়তো সে থমকে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে যাতায়াত খরচসহ অন্যান্য খরচের টাকার জন্য বেশ কয়েকটি সমিতি, এনজিওতে গেছি। এখনো টাকা জোগাড় করতে পারিনি। আমি সকলের সহযোগিতা চাই।’

৯ নম্বর সাতগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য (মেম্বার) সঞ্জিত বোনার্জী বলেন, ‘হরিবল ও তার পরিবার অনেক অসহায়। তার বাবা-মা দিন আনে, দিন খায়। সপ্তাহে একবার তলব (সাপ্তাহিক বেতন) পায় এইটা দিয়ে অনেক কষ্ট হয় তাদের চলতে-ফিরতে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় কিভাবে যাবে জানি না। আমরা চেষ্টা করছি কিছু একটা করা যায় কিনা। সবার সহযোগিতা ছাড়া তার আর কোন উপায় নেই।’

৯ নম্বর সাতগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেবাশীষ দেব রাখু বলেন, ‘হরিবল বোনার্জী শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাতগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের হুগলিছড়া চা বাগানের একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। সে বাগানের গÐিতে থেকে লেখাপড়ায় অনেক ভালো করেছে। আগে সে সরকারিভাবে এবং মানুষদের কাছ থেকে অনেক সহযোগিতা পাইছে। একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হিসেবে আাগামীতেও সরকারি সহায়তা যাতে পায় সে জন্য আমি সরকারের কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি। সকলের আর্থিক সহায়তায় সে তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে বলে আমার কামনা।’