Advertisement
সজীব উদ্দীন,দেবীগঞ্জ (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি:
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা নিশিকান্ত মালাকারের একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। এক মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের ফোনালাপে শোনা যায়, শাকিল নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করার হুমকি দিচ্ছেন।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার হুমকির কল রেকর্ডটি ফাঁস হয়।
অভিযুক্ত নিশিকান্ত মালাকার দেবীগঞ্জ উপজেলা বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। অন্যদিকে হুমকি দেয়া শাকিল বনবিভাগের চুক্তি ভিত্তিক বন প্রহরী।
ফাঁস হওয়া রেকর্ডে রেঞ্জ কর্মকর্তা ইউসুফ নামে এক বন প্রহরীর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলার সময় শাকিলের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন।
ফাঁস হওয়া কল রেকর্ডে ইউসুফকে বলতে শোনা যায়, স্যার আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। তখন কী যেন বলতে চেয়েছিলেন।
প্রতি উত্তরে রেঞ্জ কর্মকর্তা নিশিকান্ত মালাকারকে বলতে শোনা যায়, তুমি অফিসে আসো কথা বলবোনি। তুমি শোনো তোমরা তো জিনিসগুলো বুঝতে পারতেছো না। এই যে শাকিল, শাকিলের স্বয় সম্পদ কী আছে ? প্রতি উত্তরে ইউসুফ বলেন, কিছুই নেই স্যার। রেঞ্জ কর্মকর্তা পুনরায় বলেন, ওর কিছু নেই তো। ও যেই কথা গুলো বললো মুখের সামনে না, সবগুলোই তো মিথ্যা কথা। একটাও সত্য কথা না, ঠিক আছে। তো মামলা যদি পাঁচটা হয় এলাকায় থাকতে পারবে ? ইউসুফ বলেন, না স্যার।
রেঞ্জ কর্মকর্তা পুনরায় বলেন,ওকে ওয়ারেন্টের উপর থাকতে হবে। বাড়ি ছাড়া হইতে হবে, ওকে বউ বাচ্চা রেখে পালাইতে হবে।
এই বিষয়ে ভুক্তভোগী শাকিলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কিছুদিন আগে আমার ভাই দুইটা গাছের লগ নিয়ে 'স' মিলে ফারাই করতে যাচ্ছিলো। এমন সময় রেঞ্জ কর্মকর্তা আমার ভাইকে ভ্যানসহ ধরে নিয়ে যায়। এই ঘটনায় মামলা হলে জানতে পারি আমাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে আসামী করেছে। পরে আমারা সবাই তার ভ্যানটি ছাড়ানোর জন্য গেলে সেখানে ইউএনও স্যার উপস্থিত হন। ইউএনও স্যারের সামনে আমি বলেছিলাম জমির মালিকরা যখন গাছ কাটে আপনাদের ফোন দিলে তখন তো আসেন না। এই কথা বলায় তিনি আমার উপর রেগে যান। এখন মিথ্যা মামলার হুমকি দিচ্ছেন।
অন্যদিকে ইউসুফ নামে সেই বন প্রহরী প্রতিবেদককে জানায়, আমারা পেট্রল টিমের বন প্রহরী। যখন কেউ গাছ কাটে তখন আমরা ফোন দিলে রেঞ্জার স্যার আসে না। উল্টো আমাদের বলে তোমার কত টাকা খেয়ে গাছ ছেড়ে দিয়েছো। সম্প্রতি তিনি আমার নামে এটা মামলা দিছে। সেটার বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়ার জন্য ফোন দিলে তিনি শাকিলকে একাধিক মামলা দিয়ে দৌড়ের উপর রাখবেন বলে জানান।
অন্যদিকে, অভিযুক্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা নিশিকান্ত মালাকারের অফিসে এই ঘটনায় বক্তব্য নিতে গেলে তিনি বক্তব্য না দিয়ে সাংবাদিকদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন।
মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করায় রেঞ্জ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্ৰহন করা হবে কী না তা জানতে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন সরকারের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি।
এবিষয়ে দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহমুদুল হাসান বলেন, উনি একজন সরকারি চাকরিজীবী হয়ে কাউকে হুমকি ধামকি দিতে পারেন না। এটা যদি করে থাকেন তাহলে তিনি অন্যায় করেছেন। আমি ওনার সাথে কথা বলবো। ওনার যদি এই ধরনের আচরণগত সমস্যা থাকে তাহলে সংশোধন করে নিতে বলবো।
উল্লেখ্য, এর আগেও দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ ও বিরামপুরে থাকাকালীন নিশিকান্ত মালাকারের বিরুদ্ধে একাধিক অনিয়মের অভিযোগ ছিল।