Advertisement
মোসাদ্দেকুর রহমান সাজু, নীলফামারীঃ
দূর্নীতি ও দুঃশাসন দুর না হওয়া পর্যন্ত আমাদের যুদ্ধ এবং লড়াই অব্যাহত থাকবে এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান।
তিনি আরও বলেন ‘আমাদের ভাই বোনদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের সাময়িক মুক্তির মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের কবর রচনা হয়েছে। ফ্যাসিবাদ বারবার ফিরে এসে এদেশের মানুষের রক্ত নিবে, আমরা তা চাই না। অপকর্মের সাথে জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না। এসবের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
নীলফামারীর ডোমার উপজেলা পরিষদ মাঠে বুধবার ২৬শে ফেব্রুয়ারী বিকাল সাড়ে ৪টায় অনুষ্ঠিত উপজেলা জামায়াতে ইসলামী কর্তৃক আয়োজিত বিশাল পথসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে তিনি এসব কথা বলেন।
ডাঃ শফিকুর রহমান বলেন, ‘আগে যারা লুটপাট, চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, খুন, গুম, হত্যা, ধর্ষণের সাথে জড়িত ছিল, তারা ৫ই আগস্টের পর আত্মগোপন কিংবা পালিয়ে গেছে। কিন্তু বর্তমানে মানুষ বলছে চাঁদাবাজদের হাত বদল হয়েছে। আমরা সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে চাই। যেখানে চাঁদাবাজ,সেখানেই যুদ্ধ,যেখানে দখলদার, সেখানেই লড়াই করতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে ষড়যন্ত্র করে পরিকল্পিতভাবে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটানো হচ্ছে। এসময় জাতীয় নির্বাচন হলে চরম বিশৃঙ্খলা হবে। আমরা তা চাই না।
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সকল ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে,স্বাভাবিক আইন-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে জনগণকে স্বস্তির সাথে তার ভোট প্রয়োগের সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। গত সাড়ে ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে যারা ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত হয়েছিল, তাদেরকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সেসময় প্রায় পৌনে ২ কোটি ভুয়া ভোটার তৈরি করা হয়েছিল, তাদেরকে বাদ দিতে হবে।’
জামায়াতে আমীরে আরও বলেন,ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে জোর করে আওয়ামী লীগের লোকজন বসেছিল। ৫ই আগস্টের পটপরিবর্তনের পর চেয়ারম্যান-মেম্বাররা পালিয়ে গেছে। এদেশের জেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভাগুলো ভেঙে দেওয়া হয়েছে।এগুলোতে এখন কোনো জনপ্রতিনিধি নেই। একারণে জনগণের দুর্ভোগ অনেকগুণ বেড়েছে। এজন্য অতিদ্রুত স্থানীয় সরকার নির্বাচন দিতে হবে।’
তিনি বলেন, গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের জন্য পিআর (সংখ্যানুপাতিক) পদ্ধতিতে নির্বাচন করতে হবে। আমরা চাই ছোট দলগুলোও যেন সংসদে গিয়ে কথা বলতে পারে। আমরা অতীতের নির্বাচনগুলোতে দেখেছি- এক দল ৪১ শতাংশ ভোট নিয়ে ২১৮ আসন এবং আরেক দল ৪০ শতাংশ ভোট নিয়ে পেয়েছে মাত্র ৭০ আসন। একারণে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পাওয়া প্রত্যেকেই স্বৈরাচার ও বেপরোয়া হয়ে যায়। বিশ্বের ৬২টি উন্নত দেশে এই পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়। এতে কারো মন খারাপ হলে বুঝতে হবে, তাদের মতলব সুবিধাজনক না।’
দুর্নীতি ও দুঃশাসন মুক্ত মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা মেজরিটি-মাইনরিটি বুঝিনা। দল-মত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এদেশের নাগরিক। আমাদের ঐক্যের বাংলাদেশ প্রয়োজন। যে জাতি ঐক্যবদ্ধ থাকবে,সে জাতির মাথার উপর কেউ কাঁঠাল ভেঙে খাওয়া কিংবা প্রভু হয়ে সামনে আসার সাহস পাবেনা।’
দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলে জামায়াতের পরিকল্পনা নিয়ে ডাঃ শফিকুর রহমান স্পষ্টত বলেন, ‘এদেশের যুবকদের মধ্যে ৬০ ভাগই বেকার। যার অন্যতম কারণ হলো- সুশিক্ষার পরিবর্তে কুশিক্ষা। সার্টিফিকেটের বস্তা নিয়ে এক অফিস থেকে আরেক অফিসে দৌঁড়াতে হয়। আমরা দায়িত্ব পেলে নৈতিক শিক্ষা বাস্তবায়নের পাশাপাশি পড়ালেখা শেষ হবার পরই চাকরির সুযোগ করে দেওয়ার চেষ্টা করবো। এছাড়া কোরআনের শাসন প্রতিষ্ঠা নিয়ে মা-বোনদের ভয় দেখানো হয়। আমরা বলতে পারি, এদেশে কোরআনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে সামাজিক উন্নয়নে নারীরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।’
তিনি বলেন,‘দুর্নীতি ও দুঃশাসন মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলনে আমাদের ভয় দেখাবেন না, চোখ রাঙাবেন না। যে দলের নেতারা হাসতে হাসতে ফাঁসির মঞ্চে যেতে পারে, সে দলের নেতা-কর্মীদের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আল্লাহ্ ব্যতীত যারা কোথাও মাথানত করেনি, তাদের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমরা ১৮ কোটি জনগণের মাথা সোজা করে দাঁড়ানোর মতো বাংলাদেশ গড়তে চাই। ৫ই আগস্টের পর আমাদের কর্মীরা কোথাও কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা করেনি।’
পরিশেষে তিনি গণঅভ্যুত্থানের শহীদ আবু সাঈদ ও মীর মুগ্ধকে নিয়ে ‘আবু সাঈদ-মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’ এই স্লোগানকে সামনে এনে লড়াই অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমরা শহীদদের ভাগাভাগি করতে চাই না। তারা দেশ ও জাতির সম্পদ। আমরা শহীদদের নিয়ে রাজনীতি নয় বরং তাদের মাথার তাজ বানিয়ে রাখতে চাই।’
উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর খন্দকার আহমাদুল হক মানিকের সভাপতিত্বে এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল ও রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের পরিচালক মাওলানা আব্দুল হালিম, আঞ্চলিক টিম সদস্য মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ, নীলফামারী জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সাত্তার।
পথসভায় আরও বক্তব্য প্রদান করেন নীলফামারী জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর ডাঃ খায়রুল আনাম, রাজনৈতিক বিভাগের সেক্রেটারী বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিরুজ্জামান মন্টু, অফিস সেক্রেটারী অধ্যাপক আব্দুল কাদির, প্রচার ও শিক্ষা সেক্রেটারী অধ্যাপক ছাদের হোসেন, মজলিসে শূরা সদস্য মাওলানা আব্দুল হামিদ পাশা, মাওলানা ওবায়দুল্লাহ সালাফী, জেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক মনিরুজ্জামান জুয়েল, উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমীর ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল হাকিম, জামায়াতে ইসলামীর ডিমলা উপজেলা আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, জলঢাকা উপজেলা আমীর মোখলেছুর রহমান, সৈয়দপুর উপজেলা আমীর হাফেজ মাওলানা আব্দুল মুত্তাকিম, কিশোরগঞ্জ উপজেলা আমীর আব্দুর রশিদ শাহ, ডোমার উপজেলা সেক্রেটারী মাওলানা রবিউল আলম, সাবেক সেক্রেটারী হাফেজ মাওলানা আব্দুল হক, জেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি তাজমুল হাসান, উপজেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি মুহাম্মদ সোহেল রানা প্রমুখ।