lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
Last Updated 2025-02-22T10:56:49Z
জাতীয়

"তালিম ঘরে" ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে ২১ বছর ধরে বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে অধ্যাপক এম এ সামাদ

Advertisement


খাঁন আহম্মেদ হৃদয় পাশা,টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি:

টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার হাতীবান্ধা ইউনিয়নের তালিম ঘরে একুশে ফেব্রুয়ারিতে ২১ বছর ধরে বিনা মূল্যে দেওয়া হচ্ছে ফ্রি চিকিৎসা সেবা। 

টাঙ্গাইলের সখীপুর,বাসাইল উপজেলাসহ আশপাশের গ্রামাঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত রোগীদের ২১ বছর ধরে রাজধানী শহর থেকে গ্রামে গিয়ে বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছে কিডনি অ্যাওয়ারনেস মনিটরিং অ্যান্ড প্রিভেনশন সোসাইটি (ক্যাম্পস)। 

প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষাশহীদদের স্মরণে উপজেলার হাতীবান্ধা ইউনিয়নের তালিমঘরে সেবা দিয়ে আসছে এ প্রতিষ্ঠান।


এবার এ চিকিৎসাশিবিরে (মেডিকেল ক্যাম্প) ১০ দিন আগেই সাড়ে তিন হাজার রোগী নিবন্ধন করেন। প্রাথমিক রোগনির্ণয়ের জন্য চিকিৎসকের কাছে আসার আগেই রোগীদের বিনা মূল্যে রক্ত, প্রস্রাব, ইসিজি আলট্রাসনোগ্রাম,এক্স-রেসহ নানা পরীক্ষাও করানো হয়েছে। রাজধানী ঢাকা শহর থেকে অর্ধশত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আজ সকাল ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত তালিমঘরের ওই ক্যাম্পে এসব রোগীকে চিকিৎসা দেন। বিকেলে চক্ষুশিবির থেকে ২৫০ জন রোগীকে চোখের অস্ত্রোপচার (ছানি অপারেশন) করার জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে তাঁদের বাসে করে রাজধানী ঢাকায় নেওয়া হবে।


বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পাশাপাশি ওই স্থানে ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সুস্থ জীবন ধারা’ শীর্ষক একটি আলোচনা সভা হয়। 


এ ছাড়া ক্যাম্পসের প্রকাশনা ‘প্রয়াস ২১’–এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়। আলোচনা সভায় কিডনি রোগ বিষয়ে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন কিডনিবিষয়ক বিশিষ্ট চিকিৎসক ক্যাম্পসের সভাপতি অধ্যাপক এম এ সামাদ।

আলোচনায় অংশ নেন কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ মো: আবদুল হালিম, ক্যাম্পসের নির্বাহী পরিচালক রেজওয়ান সালিহীন। উপস্থিত ছিলেন সোনালী ব্যাংক পিএলসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শওকত আলী খান, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আলতাফ উল আলম, বেসরকারি সংস্থা প্রশিকার চেয়ারম্যান রোকেয়া ইসলাম, প্রশিকার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন, পরিবহন অডিট অধিদপ্তরের পরিচালক আমিনুল এহসান কবির, সখীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল রনি, সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেন প্রমুখ।

বেলা ১১টার দিকে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, মাঠজুড়ে বড় আকারের দুটি তাঁবু করা হয়েছে। কিডনি, মেডিসিন, গাইনি, চক্ষু, ইউরোলজি, নিউরোলজিসহ ১৫টি বুথে লাইন ধরে রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। স্থানীয় স্কাউটের সদস্যরা রোগীদের সুশৃঙ্খলভাবে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিটি বুথে চারজন আবার কোনো বুথে দুজন চিকিৎসক রোগী দেখছেন।


ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার ডাকাতিয়া গ্রাম থেকে ৭০ বছর বয়স্ক আবদুস সবুর এসেছেন ওই ক্যাম্পে চোখের চিকিৎসা নিতে। তিনি বলেন, ‘দুই মাস আগে আমার চোখে পোকা গিয়েছিল। এর পর থেকে চোখ লাল হয়ে যায়। এখন আমি চোখে দেখি না। আমি গরিব মানুষ। তাই এখানে এসেছি চিকিৎসা নিতে।’

বাসাইলের পাহাড় কাঞ্চনপুর থেকে লাইলী বেগম নামের এক গৃহিণী এসেছিলেন গাইনি রোগের চিকিৎসা নিতে। আগেই বিনা মূল্যে তাঁর আলট্রাসনোগ্রাম করানো হয়। এরপর চিকিৎসক তাঁকে দেখে তাঁকে বিনা মূল্যে ব্যবস্থাপত্র ও কিছু ওষুধ দেন।

গত ২১ বছরে চোখে অস্ত্রোপচারসহ লাখখানেক রোগীকে বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন বলে দাবি করে ক্যাম্পসের সভাপতি অধ্যাপক এম এ সামাদ বলেন, ‘আমার বাড়ি সখীপুর উপজেলার হাতীবান্ধা ইউনিয়নে হওয়ায় আমি চিকিৎসাসেবা দিতে আমার এলাকার সুবিধাবঞ্চিত মানুষদেরই বেছে নিয়েছি।’

কিডনি রোগবিশেষজ্ঞ ওই চিকিৎসক আরও বলেন, কিডনি রোগ দিন দিন বেড়েই চলছে। এই দেশে ৩ কোটি ৮০ লাখ লোক কিডনি রোগে আক্রান্ত। এ রোগের চিকিৎসার ব্যয় বেশি। তাই এই রোগ থেকে বাঁচতে সচেতন হতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম পরিমিত খাবার,পর্যাপ্ত পানি পান করা, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, মাদক–ধূমপান পরিহার করা এবং সময়মতো চেকআপ করে এ রোগ থেকে বাঁচা যায়।

এদিকে একুশে ফেব্রুয়ারির এইদিনে,এমন মহৎই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান স্থানীয় সুধীজনেরা।