Advertisement
সালাম মুর্শেদী, (পঞ্চগড়) প্রতিনিধিঃ পঞ্চগড়ের আটোয়ারীতে আগুনে পুড়ে যাওয়া এক মসজিদে বরাদ্দকৃত টিআরের টাকায় ভাগ না দেয়ায় ওই বরাদ্দ আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে লাকী আক্তার নামে এক মহিলা ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। তিনি উপজেলার ধামোর ইউনিয়নের ৪,৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য।
মসজিদ সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১৭ ডিসেম্বরে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ধামোর হাট জামে মসজিদটি পুড়ে যায়। মসজিদটিতে আগুন লাগার কারণে স্থানীয় মুসল্লিরা নিয়মিত নামাজ আদায় করতে পাড়ছিলেন না। এতে চরম ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হয় তাদের। সীমান্তবর্তী এবং প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ বেশিরভাগ নিম্নবিত্ত হওয়ায় মসজিদের পুনঃনির্মাণের কাজ কিছুটা স্থগিত হয়ে পরেছিল। তবে, এর মধ্যেই স্থানীয় কিছু বিত্তবান এবং সকলের সহযোগিতায় মসজিদের পুনঃনির্মাণের কাজ আরাম্ভ করে মসজিদ কর্তৃপক্ষ।
আরো জানা যায়, মসজিদের সভাপতি আতিবুল ইসলামের ছোট ভাইয়ের বউ সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের মহিলা ইউপি সদস্য। সেই সুবাদে মসজিদের সভাপতি, মসজিদ পুড়ে যাওয়ার পূর্বে মসজিদের জন্য একটি বরাদ্দ নিয়েছিলেন। সেই বরাদ্দের অর্থ দিয়ে মসজিদের ওযু খানার কাজ করা হয়। কিন্তু ওযু খানার কাজের কিছুদিন পরেই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মসজিদটি পুড়ে ভস্মীভূত হয়ে যায়। এরপর পুড়ন্ত মসজিদের সংস্কার ও কোনো একটা প্রকল্পের বরাদ্দের জন্য আবারও ওই মহিলা ইউপি সদস্যের দ্বারস্থ হয় সভাপতিসহ মসজিদ কর্তৃপক্ষ। সেই অনুযায়ী মসজিদের জন্য একটি টিআর কর্মসূচির বরাদ্দ নিয়ে আসেন মহিলা ইউপি সদস্য লাকী আক্তার। যার পরিমাণ ছিল প্রায় ১ লক্ষ চৌদ্দ হাজার টাকা।
কিন্তু গত ১৪ মার্চ শুক্রবার, জুম্মার নামাজ শেষে সভাপতি আতিবুল ইসলাম সকলের সামনে দাঁড়িয়ে কিছু বক্তব্য পেশ করেন৷ তিনি বলেন, আমার ছোট ভাইয়ের বউ এই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য। মসজিদ পুড় যাওয়ার আগে একটা বরাদ্দ নিয়ে ওযুখানার কাজ করা হয়েছিল। মসজিদ পুড়ে যাওয়ার পর তাকে বলেকয়ে আরেকটা বরাদ্দ চেয়ে নেওয়া হয়েছে এবং সেটা অন্য আরেক জায়গার বরাদ্দ ছিল সেটাই এখানে দেওয়া হয়েছে। যার কারণে কিছু খরচাপাতিও হয়েছে। তাই ১ লক্ষ চৌদ্দ হাজার টাকা বরাদ্দের কিছু অংশ তাকে দিতে হবে। তা-না হলে এই বরাদ্দটা সে পাশ করে দিবেনা বলে আমাকে জানায়৷ এসব কথার প্রতিবাদে সভাপতির সাথে স্থানীয় কিছু মুসল্লীদের বাকবিতন্ডা হয়৷
এ বিষয়ে মসজিদ কমিটির সভাপতি আতিবুল ইসলাম বলেন, আমি সরাসরি টাকার কথা বলিনি৷ আসলে আমার ছোট ভাইেয়র বউ মসজিদ পুড়ে যাওয়ার আগে একটা বরাদ্দ দিয়েছিল। সেটা দিয়ে আমরা ওযুখানার কাজ করিয়েছি। মসজিদ পুড়ে যাওয়ার পরে অন্য জায়গা থেকে আরেকটা বরাদ্দ এনে দিয়েছে। সেখানে তার কিছু খরচাপাতি হয়েছে বলে জানতে পারি। এই কথাগুলোই বলা হয়েছে। তবে আমি কোনো টাকার কথা বলিনি। এছাড়াও আমার পূর্বের সভাপতি ও বর্তমান মুয়াজ্জিনের নামে মসজিদের যৌথ একাউন্ট নম্বর রয়েছে। তাই ওই বরাদ্দের টাকাটা তুলতে পারছিনা।
এদিকে, মসজিদের পূর্বের সভাপতি আব্দুল জব্বার বলেন, গত জুম্মায় বর্তমান সভাপতি তার ছোট ভাইয়ের বউ এর জন্য মসজিদের বরাদ্দকৃত টাকার কিছু অংশ চেয়েছেন বলে শুনেছি। অনেকেই তাতে দ্বিমত পোষণ করলে তাদের মধ্যে বাকবিতন্ডাও হয়েছিল। আর মসজিদের ব্যাংক একাউন্ট আমার এবং মুয়াজ্জিনের নামেই রয়েছে৷ চাইলেই টাকা উত্তোলন করে মসজিদের কাজে লাগানো সম্ভব। কিন্তু ওই মহিলা ইউপি সদস্যের জন্য টাকাটা উত্তোলন করতে পারছিনা আর মসজিদের কাজও করা যাচ্ছেনা।
সার্বিক বিষয়ে মহিলা ইউপি সদস্য লাকী আক্তার বলেন, আমি এই মসজিদে পরপর দুইটা বরাদ্দ এনে দিয়েছি। আঃলীগ সরকার থাকাকালেও একটা বরাদ্দ এনে দিয়েছিলাম। মসজিদটা পুড়ে যাওয়ার পর অন্য জায়গা থেকে আরেকটা বরাদ্দ এনে দিয়েছি। সেখানেও আমার কিছু খরচাপাতি হয়েছে। আর মসজিদের ব্যাংক একাউন্ট পূর্বের সভাপতি ও বর্তমান মুয়াজ্জিনের নামে আছে বিধায় তাঁরা টাকা তুলতে পারছেনা। আমি কোনো বরাদ্দ আটকে রাখিনি। আর আমি কারো কাছে কোনো টাকা পয়সা চাইনি৷ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে।