Advertisement
সজীব আহাম্মেদ,দেবীগঞ্জ (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি:
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে পরিবারের অমতে বিয়ে করায় শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের ডেকে নিয়ে বেধড়ক মারধরের অভিযোগে উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদকে প্রধান আসামি করে আটজনের নামে মামলা দায়ের হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় দেবীগঞ্জ থানায় মামলাটি করেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য আব্দুস সাত্তার ওরফে ইঞ্জিল।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার (২৪ মার্চ) উপজেলার চিলাহাটি ইউনিয়নের তিস্তাপাড়া এলাকা থেকে আব্দুস সাত্তারের ছেলে মোস্তাকিম ও ইউপি চেয়ারম্যানের মেয়ে সিফাতে সাদিয়া সুহা কাউকে না জানিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যান। এর আগে একবার তারা পালিয়ে গেলে চেয়ারম্যান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় মেয়েকে ফিরিয়ে আনেন। পরে জানা যায়, ২০২১ সালেই তারা বিয়ে করেছিলেন এবং তাদের নিকাহ রেজিস্ট্রি করা ছিল।
গত সোমবার রাতে মেয়েকে খুঁজে না পেয়ে চেয়ারম্যানের ভাই নূর হোসেন ও তার সহযোগীরা রাত ৯টার দিকে মোস্তাকিমের বাড়িতে যান এবং তাদের অবস্থান জানতে চান। পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো তথ্য না দেওয়ায় মোস্তাকিমের মা ফরিদা বেগম, বাবা আব্দুস সাত্তার এবং ছোট ভাই খোকনের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রেহেনা বেগমকে চেয়ারম্যানের ভাই তার বাসায় ডেকে নেন। সেখানে চেয়ারম্যানের নির্দেশে কয়েকজন তাদের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালায়।
এই ঘটনায় ফরিদা বেগমের দুই হাত ভেঙে যায়, তাকে লাঠি দিয়ে নৃশংসভাবে আঘাত করা হয়। অন্যদিকে, খোকনকে তার কর্মস্থল ভাউলাগঞ্জ বাজার থেকে ডেকে এনে বস্তাবন্দী করে মারধর করা হয়। পরিবারের সদস্যরা নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর খোকনের শ্বশুর হোসেন আলী জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করলে মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) ভোরে গুরুতর আহত অবস্থায় চারজনকে দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরদিন বুধবার (২৬ মার্চ) মারধরের আঘাতে অন্তঃসত্ত্বা রেহেনার গর্ভপাত ঘটে। পরে রেহেনা ও তার শাশুড়িকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বর্তমানে খোকন ও তার স্ত্রী রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, আর আব্দুস সাত্তার ও তার স্ত্রী দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছেন।
এদিকে ঘটনার তিন দিন পর বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে দেবীগঞ্জ থানায় মামলা নথিভুক্ত হয়। তবে মামলার পর থেকেই নতুন শঙ্কায় রয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবার। তারা অভিযোগ করেছেন, আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে তারা সন্দিহান। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে নিরাপদে থাকতে পারবেন কি না, সেই নিয়েও তাদের দুশ্চিন্তা রয়েছে।
এবিষয়ে দেবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোয়েল রানা জানান, তদন্ত সাপেক্ষে আসামিদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
অন্যদিকে এই ঘটনায় সাংগঠনিক ভাবে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কিনা জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপি'র সভাপতি আব্দুল গণি বসুনিয়া বলেন, ঘটনাটি আমি পুরোপুরি জানি না। জেনে সাংগঠনিক ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। একক ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোন সুযোগ নেই।