lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৫
Last Updated 2025-03-16T07:41:58Z
ব্রেকিং নিউজ

পোরশায় প্রধান শিক্ষকের দাপটে কান্নায় দিন কাটছে ৮বছর বেতন বঞ্চিত জরুল ইসলাম শিক্ষকের

Advertisement


পোরশা (নওগাঁ) প্রতিনিধিঃ 

নওগাঁর পোরশায় আওয়ামী লীগ নেতা প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলাম বুলবুলের রাজনৈতিক হয়রানির শিকার হয়েছেন একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহকারি শিক্ষক (গ্রন্থাগার) জহুরুল ইসলাম। ঐ শিক্ষকের  সকল শিক্ষা সনদ অবৈধ দাবী করে ৮ বছর ধরে বেতন ভাতা আটকিয়ে রেখেছেন প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলাম বুলবুল। এমনকি তাকে গত ৮ বছর ধরে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে দেননি তিনি। মানবেতর জীবনযাপন করছে ঐ শিক্ষক।


ঘটনাটি  উপজেলার আমদা উচ্চ বিদ্যালয়ে ঘটেছে। এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলাম বুলবুল পোরশা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক। উপজেলার নিতপুর ইউনিয়ন বিএনপির কার্যালয় পোড়ানোর মামলায় তিনি বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছেন।


সহকারি শিক্ষক (গ্রন্থাগার) জহুরুল ইসলাম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমি আর্থিকভাবে অসচ্ছল মানুষ। জমি বিক্রয় করা টাকা দিয়ে চাকরি নিয়েছিলাম। ৮বছর ধরে কোন বেতন ভাতা পাই না। কখনো খেয়ে, কখনো না খেয়ে দিন পার করছি। চাকরি ফিরে পাওয়ার অনুরোধ করলে, প্রধান শিক্ষক তিন লাখ টাকা দাবি করেন। সরকারের কাছে ন্যায্য বিচার দাবি করেন।


ভূক্তভোগি ঐ শিক্ষক  উপজেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, নওগাঁ জেলা শিক্ষা অফিসার, এমনকি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়ে তাদের থেকে লিখিত প্রতিকার পেলেও আওয়ামী লীগের দলীয় ক্ষমতায় ৮ বছর বেতন-ভাতা ও বিদ্যালয় থেকে তাকে দূরে রেখেছেন প্রধান শিক্ষক।


এসকল দপ্তর একাধিকবার ঐ শিক্ষককে চাকরি পুনর্বহাল করে বেতন-ভাতা চালু করার নির্দেশ দিলেও  আওয়ামী লীগের দলীয় ক্ষমতায় সকল নির্দেশকে অমান্য করে এসেছেন প্রধান শিক্ষক। বেতন-ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন ভুক্তভোগি শিক্ষক জহুরুল ইসলাম।


শুধু জহুরুল ইসলামকেই নয়, কারণে-অকারণে চাকরি থেকে বরখাস্ত করতেন তার বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীদের। আবার মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তাদের চাকরি ফিরিয়ে দিতেন তিনি। আর চাহিদা মাফিক টাকা দিতে ব্যর্থ হলে করা হতো তাদের স্থায়ী বরখাস্তের আদেশ। টাকা কামাতে দলীয় পদকে পুঁজি করে সরকারি নিয়ম নীতিকে তোয়াক্কা না করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালাতেন তিনি।


অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০১৭ সালের ২২ জানুয়ারি সহকারি গ্রন্থাগারিক জোহুরুল ইসলামের সকল শিক্ষা সনদ অবৈধ দাবী করে তাকে স্থায়ী বরখাস্ত ও বেতন ভাতা বন্ধ করে দেন ঐ প্রধান শিক্ষক। ২০১৯ সালে প্রধান শিক্ষকের নিজ বাড়িতে হামলা ও ভাংচুরের অভিযোগ এনে বিজ্ঞান শাখার সহকারি শিক্ষক রেজওয়ানুল হক শাহ্ চৌধুরী ও সহকারি লাইব্রেরিয়ান জোহরুল ইসলামকে বরখাস্ত করে তাদের বেতন ভাতা বন্ধ করে দেন।


অথচ বরখাস্তকৃত ওই তিন শিক্ষককে বিভিন্ন সময়ে নিয়োগ দিয়েছিলেন প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলাম বুলবুলসহ তৎকালীন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে দুই শিক্ষক চাকরি ফেরত পেলেও ফেরত পাননি জহুরুল ইসলাম। চাহিদা মাফিক টাকা দিতে ব্যর্থ হলে ২০১৭ সালের ২২ জানুয়ারি তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেন প্রধান শিক্ষক।


স্থায়ী বহিষ্কারের নোটিশ পেয়ে সহকারি শিক্ষক জহুরুল ইসলাম চাকরি ফেরত পেতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে শুরু করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর পর্যন্ত হন্যে হয়ে ঘুরতে থাকেন। লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই সমস্ত দপ্তর তার চাকরি ফেরত দিয়ে বেতন-ভাতা পরিশোধ করার জন্য প্রধান শিক্ষককে নির্দেশ প্রদান করলেও তিনি গ্রাহ্য করেননি।


জহুরুল ইসলামের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ২২ মে নওগাঁ জেলা শিক্ষা অফিসার এসএম মোসলেম উদ্দিনকে তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। সরেজমিন তদন্ত পূর্বক  প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, প্রধান শিক্ষক সরকারি নির্দেশনাকে তোয়াক্কা না করে ব্যক্তিগত আক্রোশে নিজেই ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অসৎ উদ্দেশ্যে  এধরনের মনগড়া সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সহকারি শিক্ষক (গ্রন্থাগার)বেআইনিভাবে হয়রানি করার জন্য প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।


জেলা শিক্ষা অফিসারের নির্দেশনায় ২০১৯ সালের ১০অক্টোবর পোরশা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ওয়াজেদ আলী মৃধা প্রধান শিক্ষককে পত্রের মাধ্যমে সহকারি লাইব্রেরিয়ানকে চাকরিতে পুনর্বহাল এবং বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন।


একই বছর ১৪ অক্টোবর রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড এর পরিচালক বরাবর একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন পোরশা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল হামিদ রেজা। সেই প্রতিবেদনের সার্বিক মন্তব্যে তিনি লেখেন, প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কর্তৃক সহকারি লাইব্রেরিয়ান জহুরুল ইসলামকে বরখাস্ত বিধিসম্মত হয়নি।


 প্রধান শিক্ষক ও বিগত সভাপতি বিদ্যালয়টিতে বিভিন্নরকম অন্যায়, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও বেআইনি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে অরাজকতার সৃষ্টি করে চলেছেন। তার উল্লেখ্য কর্মকাণ্ডে উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত করছে ও শিক্ষার মান ক্ষুন্ন হচ্ছে । 


এ ব্যাপারে অভিযুক্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ও আমদা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিএনপির কার্যালয় পোড়ানোর মামলায় কারাগারে আটক থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।


উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও আমদা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি আরিফ আদনান জানান, শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা রয়েছে সহকারি শিক্ষক (গ্রন্থাগার) জহুরুল ইসলামকে তার চাকরি ফেরত দিয়ে বেতন-ভাতা চালু করার। জহুরুল ইসলামকে চাকরি থেকে দূরে রাখার কোন যৌক্তিকতা নেই। প্রধান শিক্ষক যেটা করছে, সেটা ব্যক্তিগত কোন আক্রোশ থেকে করছে বলে মনে হয়। তিনি আরও বলেন,ঐ শিক্ষকের বেতন ভাতা চালু  ও পুনর্বহাল করতে প্রধান শিক্ষককে নির্দেশনা দেয়া ছাড়া অফিসে সাক্ষাৎ করতে ব‌লেও  কর্ণপাত  করেননি।