lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
শুক্রবার, ৭ মার্চ, ২০২৫
Last Updated 2025-03-07T09:13:29Z
আইন ও অপরাধ

শ্রীমঙ্গলে বিষ প্রয়োগে খামারের ৯ গরু হত্যা, পিতা-পুত্র গ্রেপ্তার

Advertisement

 



ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার:

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে একটি গবাদিপশুর খামারে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়েছে দেশীয় প্রজাতির ৯টি গরু। বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) ভোর থেকে রাত পর্যন্ত উপজেলার ৬ নম্বর আশিদ্রোন ইউনিয়নের পশ্চিম রামনগর এলাকার বাসিন্দা উদ্যোক্ত মো. সুলেমান মিয়ার গবাদিপশু খামারের ওই ৯টি গরু একে একে মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। খামারের মালিক মো. সোলেমান মিয়ার অভিযোগ পূর্ব শত্রæতার জের ধরে গোখাদ্যের সাথে বিষ মিশিয়ে দেওয়ায় এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হলে পুলিশ মামলার এজহারভুক্ত আসামি একই গ্রামের রমজান মিয়া (৫৫) ও তার ছেলে মনির মিয়াকে (৩০) গ্রেপ্তার করেছে। 

খামারের মালিক সুলেমান কান্না জড়িত কণ্ঠে অভিযোগ করে বলেন, ‘গত ৩ মার্চ প্রতিবেশী রমজান মিয়ার একটি ছাগল আমাদের জমির ফসল নষ্ট করলে ওই ছাগলটিকে আমরা স্থানীয় শংকরসেনা খোয়াড়ে (গৃহপালিত পশুদের আটক রাখার স্থান) দেই। এছাড়া একটি বিয়ে সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়েও আমাদের সাথে ওই পরিবারের (রমজান মিয়ার পরিবার) বিরোধ রয়েছে। ছাগল খোয়াড়ে দেবার পরদিন ৪ মার্চ রমজান মিয়া আমাদের বাড়িতে এসে প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছিল। এরপর বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) ভোরে আকষ্মিক আমার খামারের গরুগুলো একে একে অসুস্থ হতে থাকে। সকালে দুইটি গরু মারা যায়। এরপর রাত পর্যন্ত মারা যায় আরো ৭টি গরু। খামারে আরও ১৩টি গরুর অবস্থা আশঙ্কাজনক। ছাগল খোয়াড়ে দেবার প্রতিশোধ নিতে রমজান মিয়া ও তার ছেলে মনির মিয়া গোখাদ্যের সাথে বিষ মিশিয়ে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। এ ঘটনায় আমি শ্রীমঙ্গল প্রাণীসম্পদ অফিস, ইউএনও স্যারকে জানিয়ে থানায় লিখিত মামলা দায়ের করেছি। মোট ২২টি গরু নিয়ে আমার খামারটি গড়ে ওঠেছিল। ৯টি গরু মারা যাওয়ায় আমরা আর্থিকভাবে বিশাল ক্ষতির মুখে পড়েছি। যারা এই অবলা পশুগুলোকে এভাবে বিষ প্রয়োগে হত্যা করেছে আল্লাহর কাছে তাদের বিচার চাই।’ 

খামারের মালিক সুলেমান মিয়ার বাবা মো. মাসুক মিয়া বলেন, ‘আমাদের পরিবারের সাথে পার্শ্ববর্তী বাড়ির বাসিন্দা সবজি ব্যবসায়ি মো. রমজান মিয়ার পরিবারের সাথে বিয়ে সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে পূর্ব থেকেই বিরোধ চলমান। এরই মাঝে গত ৩ মার্চ রমজান মিয়ার একটি ছাগল আমাদের জমির ফসলের ক্ষতি করে। এ কারনে ওই ছাগলটিকে আটক করে আমরা স্থানীয় খোয়াড়ে (গৃহপালিত পশুদের আটক রাখার স্থান) দেই। এ ঘটনার পর ৪ মার্চ রমজান মিয়া আমাদের বাড়িতে এসে হুমকি দিয়ে বলেন, তুই আমার ছাগল আটক করছস, তোরে আমি উচিত শিক্ষা দিমু। ৬ মার্চ বৃহস্পতিবার ভোরে আমার ছেলে সুলেমান ঘুম থেকে ওঠে খামারে গিয়ে দেখে দুইটি গরুর মুখ দিয়ে লালা পড়ছে। এর কিছুক্ষণ পরই গরু দুটি ছটফট করতে করতে মারা যায়। এ বিষয়ে উপজেলা পশু কর্মকর্তা এবং শ্রীমঙ্গল থানায় বিষয়টি অবহিত করলে প্রাণি সম্পদ অফিসের কর্মকর্তারা সরেজমিন আসেন। তারা বাকি গরুগুলিতে চিকিৎসা প্রদান করলেও সারাদিন ও রাতে আরও ৭টি গরু মারা যায়। আমাদের খামারে ছোট-বড় মিলে ২২টি গরু ছিল। এর মধ্যে ৯টি গরু মারা গেছে। বাকি ১৩টি গরুর অবস্থাও ভালো নয়।’

শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘এমন দুঃখজনক ঘটনার খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে আমাদের মাঠ কর্মকর্তা (এলএফএ) মোজাহিদুল ইসলামকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছি। মৃত গরুগুলোর বøাড স্যাম্পল সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে ফলাফল পাবার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে মারা যাওয়ার প্রকৃত কারণ।’

শ্রীমঙ্গল থানা সূত্র জানায়, গোখাদ্যের সাথে বিষ প্রয়োগে ৯টি গরুর মৃত্যুর বিষয়ে খামারী সুলেমান মিয়া দুই জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন। বৃহস্পতিবার রাতেই পুলিশ এলাকায় অভিযান চালিয়ে মো. রমজান মিয়া ও তার ছেলে মনির মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের শুক্রবার (৭ মার্চ) মৌলভীবাজার আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমিনুল ইসলামের মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. ইসলাম উদ্দিন বলেন, ‘ঘটনার খবর পেয়ে আমি প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সাথে আলাপ করে বিষয়টি খোঁজখর নিয়ে আমাকে জানানোর জন্য বলেছি। আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই খামারীর সহায়তায় এগিয়ে আসবো।’