Advertisement
ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার:
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও মৌলভীবাজার-৩ (সদর-রাজনগর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমান বলেছেন, 'এখন একটা কথা উঠেছে, নির্বাচন আগে না বিচার আগে। অবশ্যই বিচার আগে। এখন বৈশাখ মাস চলছে। শেখ হাসিনার এই বিচার আগামী তিনমাসের মধ্যে শেষ করতে হবে। সংস্কার কাজও তিনমাসের মধ্যে সম্ভব। তারপরেও অন্তবর্তীকালীন সরকারের হাতে আরো কয়েকমাস সময় থাকে অগ্রহায়ণ মাস আসতে। মানুষ সামনের অগ্রহায়ণ মাসের শেষে জাতীয় নির্বাচন চায়।' তিনি বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) বিকেলে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আমতৈল উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে আমতৈল ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
এম নাসের রহমান আরো বলেন, 'গত সাড়ে পনেরো বছর আমরা রাজনীতি করতে পারিনি। এরকম ইউনিয়ন সম্মেলন চিন্তাও করা যায়নি। এরকম প্রোগ্রামের আয়োজন করলেই পুলিশের পাঁচটা গাড়ি এসে আমাদের মিটিং বন্ধ করে দিতো। স্বৈরাচার তখনো কিন্তু বুঝে নাই, যে তার দিন একদিন শেষ হবে। এই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আটমাস আগে যা ঘটেছে, এগুলো সরাসরি আল্লাহর বিচার। সীমাহীন লাগামহীন জুলুম নির্যাতন চালিয়েছে। একটা সাতাত্তর বছর বয়সী মহিলা পনেরোশত মানুষকে হত্যা করেও ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করেছে। বিশ হাজার মানুষকে নির্বিচারে গুলিবিদ্ধ করে আহত করেছে। পঙ্গু করেছে। জানালা দিয়ে নারী শিশু যারা তাকিয়েছে তাদেরকেও নির্বিচারে গুলি করেছে। হত্যা করেছে। এই শেখ হাসিনার বিচার আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এই বাংলার মাটিতে হতে হবে এবং তার বিচার মৃত্যুদন্ড ছাড়া আর কোন বিচার নেই। শেখ হাসিনার নির্দেশে এই পুলিশ বাহিনী স্বেচ্ছাচারভাবে নির্বিচারে মানুষকে গুলি করে মেরেছে। এর বিচার হতে হবে।'
সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমান বলেন, 'গ্রাম- গঞ্জের মানুষে তো এত ফেসবুক টিপায় না, এখন ফেসবুকে যুদ্ধ শুরু হয়েছে এ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পাঁচ বছর থাকতো। কিন্তু রাজনৈতিক সরকার ছাড়া তো মানুষ জনগণের ভোটে নির্বাচিত এমপি পাবে না। এমপি না পেলে তো এলাকার উন্নয়ন করবে কে? উপজেলা চেয়ারম্যানের তো গাড়ির চাকা পাল্টানোর ক্ষমতা নেই। তাহলে উন্নয়ন হবে কিভাবে? গণতন্ত্র পুর্নাঙ্গ জাতীয় সংসদ ছাড়া দেশ আগাতে পারবে না।' তিনি অন্তর্বতী সরকারকে সংস্কার কাজের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, 'আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে হাসিনার দুই চার পাঁচটা বিচারের মৃত্যুদন্ড দিতে হবে। হাসিনার মৃত্যুদন্ডের জন্য এতো প্রমানের দরকার নেই। সব প্রমাণ সামনে। সব ভিডিও ফুটেজেই আছে। এখন দেশবাসী তার দ্রুত বিচার করে মৃত্যুদন্ড দেখতে চায় । এখনতো আওয়ামী লীগ নামে কোন দল নাই। নির্বাচন কার সাথে করবো। এদেশে পার্টিই ছিল চারটি বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জামায়াত আর জাতীয় পার্টি। জাতীয় পার্টি শেষ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। আর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিজের পায়ে নিজেই গুলি করে মারা গেছে। দলটি ইন্তেকাল করেছে। বাচ্চারা একটা দল করেছে, অলরেডি এ দল নিয়ে টানাটানি শুরু হয়েছে। এক বাচ্চা এডভাইজারের এপিএসের চাকুরী গেছে। তার এপিএসের ব্যাংক একাউন্টে ৪১৩ কোটি টাকা পাওয়া গেছে। এই যে ঘটা করে তাকে চাকুরীচ্যুত করা হয়েছে এর জন্য । এই বাচ্চাদের বয়স হল ২৭ বছর। এদের এখনো নাকে টিপ দিলেও দুধ আসো না।'
আমতৈল ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীনের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুর রহিম রিপন। এতে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আব্দুল মুকিত, মো. ফখরুল ইসলাম, বকসী মিছবাউর রহমান, মুজিবুর রহমান মজনু, সদর উপজেলার বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আয়াছ আহমদ, যুগ্ম আহ্বায়ক মারুফ আহমদ।
এদিকে ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলনকে ঘিরে তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মাঝে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা গেছে। বিশেষ করে নিজের ভোটে পছন্দের নেতা নির্বাচনকে তারা স্বাগত জানিয়েছে। সভাপতি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় আনোয়ার হোসেন নির্বাচিত হন। সাধারণ সম্পাদক পদে গোপন ব্যালটে দুজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধীতা করেন। এর মধ্যে এনামুল হক কিবরিয়া ২২৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। নিকটতম প্রার্থী রফিকুল ইসলাম ময়নুল পান ১৯০ ভোট। কাউন্সিলে মোট ভোটার ছিল ৪৫৯টি। কাস্ট ৪২৩ টি। বাতিল ৪টি। প্রিজাইডিংয়ের দায়িত্ব পালন করেন জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ফখরুল ইসলাম, মুজিবুর রহমান মজনু, উপজেলা আহবায়ক কমিটির সদস্য জিল্লুর রহমান, কাজল মাহসুদ,খালেদ চৌধুরী, জিল্লুল বক্স।