Advertisement
ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার:
মৌলভীবাজারের হাকালুকি, কাউয়াদীঘি, হাইল হাওরসহ সাত উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। এবার বোরোর বাম্পার ফলনে কৃষকের চোখে-মুখে আনন্দের হাসি। প্রচন্ড খরা আর গরমের মাঝেও স্বপ্নের সোনালী ফসল বোরো ধান কর্তন চলছে উৎসাহ-উদ্দীপনায়। ধান কাটার সাথে সাথে মাড়াই আর ঝাড়াইয়ের কাজও চলছে সমানতালে। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকরা অনেকটা নির্ভার। তবে ধান কাটা শেষ হবার আগে শিলাবৃষ্টি হলে ধানের ক্ষতি আশঙ্কা প্রান্তিক কৃষকদের। শিলাবৃষ্টি বা অন্য কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবারের ফলনে লাভের প্রত্যাশা করছেন তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এবার মৌসুমের শুরুতে জেলার হাওরাঞ্চল ও হাওরাঞ্চলের বাইরে ৬২ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে ব্রি-৯২ (আগাম জাত), ব্রি-৮৮, বি-৯০, বি-২৮ জাতের ধান আবাদ হয়েছে ৬২ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ জেলার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪০ হেক্টর বেশি জমিতে আবাদ হয়েছে। চলতি মৌসুমে ২ লাখ ৪৮ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন ধান ফলনের প্রত্যাশা কৃষি বিভাগের।
১৪ ও ১৫ এপ্রিল সরজমিনে জেলার হাইল হাওর, হাকালুকি হাওর, কাউয়াদীঘি হাওরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে সর্বত্র বোরো ধান কাটা চলছে। কৃষকরা উৎসবের আমেজে কাটা ধান মাড়াই করে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকদের চোখে-মুখে আনন্দের আবহ।
জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার হাইল হাওরের নওয়াগাঁও, যাত্রাপাশা, রুস্তমপুর, হাকালুকি হাওরের আলীনগর, জাব্দা, কাটুয়া, বিলাইবিল, উত্তর বাগবন্দ, পাড়কান্দি, মেদাবিল, বারুঘরবিল, লালবিল এলাকায় গেলে কৃষকরা জানান, এবার অধিক ফলন প্রাপ্তির প্রত্যাশা তাদের। ইতোমধ্যে ধান কাটা শুরু হয়েছে। ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় তারা খুশি।
হাইল হাওর পাড়ের নওয়াগাঁও গ্রামের কৃষক মো. আজাদ মিয়া বলেন, ‘আমি এবার ২৭ একর জমিতে ব্রি-৮৮ জাতের ধানের আবাদ করেছি। ফলন অত্যন্ত ভালো হয়েছে। গত দুইদিন ধরে ধান কাটা চলছে। এবার আমি প্রতি একরে ৫০ থেকে ৫৫ মন ধান পাবো বলে প্রত্যাশা করছি।’
একই এলাকার কৃষক ফজলু মিয়া বলেন, ‘আমার ১০ একর জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছি। একর প্রতি ৫০ মন করে ধান পেতে পারি।’
হাকালুকি হাওর পাড়ের কৃষক আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমি ইবার ৪ একর জমিকে বোরো ধান লাগাইছি। ইবার ফলন অইছে মাশাল্লা। আশা কররাম ২০০ মন ধান পাইমু। এর থাইক্কা কিছু বেশিও পাইতাম পারি। আমি বিরাট খুশি। গতবার ধান ভালা অইছে না, ইবার গতবারের ক্ষতি পুইষ্যা যাইব।’
আলীনগর গ্রামের কৃষক মো. চুনু মিয়া বলেন, ‘আমার নিজের কোন জমি-জিরাত নাই। আরেক জনের ১ একর জমি বর্গা নিয়া ধান ফলাইছি। মনে লয় ৫০ মন ধান পাইতে পারি। খারাপ না, ভালাই ফলন অইছে।’
একই এলাকার কৃষক দুরুদ মিয়া বলেন, ‘এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হইছে। আমরা এ ফলনে খুবই খুশি।’
হাইল হাওর এলাকায় ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পাড় করছেন খাইছড়া চা বাগানের অস্থায়ী শ্রমিক পূজন ভুঁইয়া, রানা ভুঁইয়া, সাজু ভুঁইয়া, সুমন চাষা, ও জাগছড়া চা বাগানের অস্থায়ী শ্রমিক গনেশ মুড়া। তারা জানান, বোরো মৌসুমে তারা বাগানের কাজ না করে হাইল হাওর এলাকায় ধান কাটা শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। এ বছর হাইল হাওরে বেরো ধানের ফলন ভালো হওয়ায় তাদের ধান কাটার মজুরী বেড়েছে। গত বছর সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ধান কাটার পর দৈনিক মজুরী পেতেন ৩৫০ টাকা করে। আর এবার মজুরী পাচ্ছেন দৈনিক ৪৫০ টাকা করে। তবে প্রচন্ড গরম থাকায় এ বছর প্রতিদিনই খুব ভোরে ধান কাটা শুরু করেন তারা। শেষ করেন দুুপুরের দিকে।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দিন বলেন, ‘চলতি মৌসুমে জেলায় হাওর ও হাওরের বাইরে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৬২ হাজার ১০০ হেক্টর। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক জমিতে অর্থাৎ ৬২ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষাবাদ হয়েছে। হাওর অঞ্চলে ফলন খুব ভালো হয়েছে ব্রি-৯২ জাতের ধানের। এ অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়ার সঙ্গে এই জাতের ধান অভিযোজিত হয়েছে। চলতি বছরে ২ লাখ ৪৮ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন ধান ফলনের আশা করছি।’