Advertisement
বরগুনা প্রতিনিধি:
একাধিক সাংবাদিক নির্যাতনকারী দুর্নীতিবাজ আমতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চাওড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আখতারুজ্জামান বাদল খাঁনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে পাতাকাটা একটি অনাথ আশ্রম থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। শুক্রবার তাকে আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তার করায় আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছে। তারা বাদল খাঁনের কঠোর শাস্তি দাবী করেছেন।
বরগুনা প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর সালেহ বলেন, আখতারুজ্জামান বাদল খাঁন আওয়ামীলীগ দলীয় প্রভাব, কালো টাকার প্রভাব ও পেশী শক্তির প্রভাবখাটিয়ে বিগত দিনে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাঁধা সৃষ্টি করেছেন। এমনকি তার অপকর্মের বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিকদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতের একাধিক ঘটনা রয়েছে। কালো টাকা ও দলীয় প্রভাবই ছিল তার এমন কর্মকান্ডের মুল চালিকাশক্তি। সাংবাদিক নির্যাতনকারী বাদল খানের শাস্তি দাবী জানান তিনি।
জানাগেছে,আমতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আখতারুজ্জামান বাদল খাঁন ২০১১ সালে ভোট কারচুপির মধ্য দিয়ে চাওড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হয়। এরপর কালো টাকা ও আওয়ামীলীগ দলীয় প্রভাব খাটিয়ে করে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পরেন। সাংবাদিক, বিএনপি নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে নির্যাতন ছিল তার নিত্য নৈমিত্তিক কাজ বলে অভিযোগ চাওড়ার পাতাকাটা গ্রামের জুয়েল মাদবরের। তার নির্যাতনের হাত থেকে তার দলীয় নেতাকর্মীরাও রক্ষা পায়নি। তিনি গত ১৬ বছরে অন্তত শতাধিক মানুষকে লাঞ্ছিত ও মারধর করেছেন। তার মতের বিরুদ্ধে গেলেই তার ওপর নেমে আসতো নির্যাতন ও মিথ্যা মামলার হয়রানী। আওয়ামীলীগ শাসন আমলে তিনি ছিলেন আমতলীর গডফাদার বলে আরো অভিযোগ করেন জহির মাতুব্বর। জমি দখল, খাল দখল, টেন্ডারবাজি, দখলবাজী, নিয়োগ বানিজ্য ও বাজার দখলসহ সকল অপকর্মের হোতা ছিলেন তিনি। উপজেলা সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি মাহবুবুল ইসলাম ও মহিবুল্লাহ কিরণের নেতৃত্বে তার ছিল একাধিক সন্ত্রাসী বাহিনী। তারা তার নির্দেশে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতেন বলে অভিযোগ করেন উত্তর ঘটখালী গ্রামের বশির উদ্দিন। এছাড়াও তিনি একাধিক সেতু নির্মাণ ও খাল খনন কাজ না করে অন্তত ১৫ কোটি টাকার অধিক আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে দুদকে রয়েছে। কিন্তু আওয়ামীলীগ প্রভাব খাটিয়ে তিনি ওই মামলার তদন্ত কার্যক্রম স্থগিত করে রেখেছেন। গত ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনার পতনের পরেও আওয়ামীলীগের অধিকাংশ নেতা পালিয়ে গেলেও তিনি পালায়নি। অভিযোগ রয়েছে উপজেলার বিএনপির কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় তিনি গত ৮ মাস ধরে অবাধে চলাফেরা করছেন। পুলিশ প্রশাসনও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সাহস পায়নি এমন অভিযোগ নাম প্রকাশে অনিচ্ছক একাধিক বিএনপির নেতাকর্মীর। গত বছর ৫ আগষ্ট উপজেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয় ভাংচুর মামলায় তাকে আসামী করা হয়। কিন্তু ওই বিএনপি নেতাদের সখ্যতায় তিনি আদালত থেকে জামিন নেন। আরো অভিযোগ রয়েছে বিএনপি ওই প্রভাবশালী নেতাদের মমদে তিনি চাওড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় তার কর্মকান্ড চালিয়ে আসছেন। তারই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রাতে চাওড়া ইউনিয়নের পাতাকাটা এলাকার একটি অনাথ আশ্রমের সনাতনী ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন। খবর পেয়ে চাওড়া ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা তাকে ওই আশ্রমে আটকে রাখে। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে। শুক্রবার বিকেলে পুলিশ তাকে আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরন করেছেন। বাদল খানের গ্রেপ্তারে বিএনপি, আওয়ামীলীগ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছে। তারা বাদল খাঁনের কঠোর শাস্তি দাবী করেছেন।
আমতলী সরকারী কলেজ ছাত্রদল সভাপতি ইমন মিয়া বলেন, বাদল খাঁন সন্ত্রাসীদের গডফাদার। তার সন্ত্রাসী বাহিনীর অত্যাচারে সাধারণ মানুষ রক্ষা পায়নি। তার মতের বিরুদ্ধে গেলেও তিনি সাধারণ মানুষকে মারধর ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করছেন। তার কঠোর শাস্তি দাবী করেন তিনি।
চাওড়া ইউনিয়ন যুবদল সদস্য সচিব আখতারুল ইসলাম বলেন, আওয়ামীলীগের ১৬ বছরে ঘরে ঘুমাতে পারিনি। অহেতুক মিথ্যা মামলা দিয়ে বাদল খাঁন হয়রানী করেছেন। তিনি আরো বলেন, বেশ কয়েকবার বাদল ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আমাকে নির্যাতন করেছে। তার কঠোর শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। তিনি আরো বলেন, বাদল এতো অন্যায় অত্যাচারের পরেও কিভাবে গত ৮ মাস এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। বিএনপির কিছু নেতাদের কারনে এমন হয়েছে।
চাওড়া ইউনিয়ন যুবদল সাবেক আহবায়ক মোমেন আকন বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের এক মাস পরে বাদল খানের মামাতো ভাই ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী মাহবুবুল ইসলামের বাহিনী আমাকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেছে। এগুলোও বাদল খানের মদদেই হয়েছে। তিনি আরো বলেন, দখল বাজিন্য, টেন্ডার বানিজ্য ও নিয়োগ বানিজ্যসহ সকল অপকর্মের হোতা ছিলেন বাদল খাঁন। বাদল খাঁনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ প্রশাসনও নিরব ছিল। তার কঠোর শাস্তি দাবী করেন তিনি।
বরগুনা জেলা সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অ্যাড. গোলাম মোস্তফা কদের বলেন, একাধিক সাংবাদিক নির্যাতন ও লাঁিঞ্ছতকারী আখতারুজ্জামান বাদল খানের কঠোর শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। তিনি আরো বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ সাংবাদিকরা বাদল খাঁনের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিতে চাইলে বিনা খরচে তাদের পক্ষে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমতলী থানার ওসি মোঃ আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, গত বছর ৫ আগষ্ট পৌরসভা কার্যালয় ভাংচুর মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে শুক্রবার আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।