Advertisement
আশরাফুল ইসলাম, গাইবান্ধা ::
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলায় হ-য-ব-র-ল অবস্থার মধ্যে দিয়ে বাংলা বর্ষবরণ-১৪৩২ উৎসব পালন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই জাতীয় সংগীত পরিবেশন নিয়ে হট্টগোল ও বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। এসময় অনুষ্ঠানের সঞ্চালকের কাছ থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নিয়ে অনুষ্ঠান বয়কটের ডাক দেন রাজনৈতিক দলের নেতারা। সেই সঙ্গে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ফ্যাসিস্টের দোসর আখ্যা দেয়া হয়।
এদিকে, বর্ষবরণ অনুষ্ঠানটি বাজেট স্বল্পতার কথা বলে সংকোচিত (সীমিত পরিসর) আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন। তবে বরাদ্দের অর্থ ব্যয় করে প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেদের জন্য বৈশাখের পোশাক-পরিচ্ছেদ ক্রয় করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার (১৪এপ্রিল) সকাল ১১টার দিকে সাদুল্লাপুর উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত 'পহেলা বৈশাখ উদযাপন' অনুষ্ঠানস্থল সাদুল্লাপুর বহুমূখী পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা জানান, উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে বর্ষবরণ উপলক্ষে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা শেষে হাইস্কুল মাঠে সমাবেশস্থলে অংশ নেয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষক-কর্মচারী ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সদস্য এবং উপজেলা প্রশাসনের কর্মকতা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। অনুষ্ঠানের শুরুতেই বাজানো হয় জাতীয় সংগীত ও এসো হে বৈশাখ এসো এসো গানটি। এতে বাদ পড়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সদস্য ছাড়াও মাঠে দাঁড়িয়ে থাকা বিভিন্ন পেশার মানুষ। কোন বার্তা না দিয়েই শুধুমাত্র উপজেলা প্রশাসনের কর্মকতা-কর্মচারীরা এই জাতীয় সংগীতে অংশ নেয়।
এ ঘটনায় ক্ষোভ ও উত্তেজনার সৃৃষ্টি হয়। পরে প্রতিবাদ জানালে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে হট্টগোল ও বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এক পর্যায়ে অনুষ্ঠানের সঞ্চালক উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মানিক চন্দ্র রায়ের হাত থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নিয়ে অনুষ্ঠান বয়কটের ডাক দেন সাবেক ভিপি ও বিএনপি নেতা আ স ম সাজ্জাদ হোসেন পল্টন।
এসময় মাইক্রোফোনে সাজ্জাদ হোসেন পল্টন বলেন, প্রশাসন ইচ্ছেমতো জাতীয় সংগীত গাইছে। এমনটি হতে পারেনা। মাঠে উপস্থিত কেউ জাতীয় সংগীত গাইবেন না। এসময় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ফ্যাসিস্টদের দোসর বলে আখ্যা দিয়ে তাদের প্রতিহত করার ঘোষণা দেন তিনি।
এ বিষয়ে সাদুল্লাপুর বহুমূখী পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. এনশাদ আলী সরকার বলেন, মাঠে সমাবেশে স্থলে অংশগ্রহণকারী সকলকে সাথে নিয়ে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের নিয়ম। কিন্তু মাঠের পশ্চিম পাশে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীসহ অন্যরা যখন অপেক্ষা করছে ঠিক তখনেই মাঠের পূর্ব পাশে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীত পরিবেশন শুরু করেন। এনিয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতাসহ উপস্থিত লোকজনের মধ্যে হট্রগোলের সৃষ্টি হয়।
এ বিষয়ে সাদুল্লাপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক ও জেলা তাঁতীদলের আহবায়ক সাবেক ভিপি আ স ম সাজ্জাদ হোসেন পল্টন বলেন, মাঠে কোন ধরণের বার্তা না দিয়ে আমাদের সকলকে অবজ্ঞা করে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। পরে সঞ্চালকের কাছে মাইক্রোফোন নিয়ে প্রতিবাদ জানাই। প্রশাসনের ইচ্ছেমতো জাতীয় সংগীত পরিবেশনের ঘটনায় অনুষ্ঠানের শৃঙ্খলা নষ্ট হয়। ফ্যাসিস্ট মুক্ত এবারের বর্ষবরণ সারাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়। তবে এখনো ফ্যাসিস্টদের দোসর অনেক কর্মকর্তা নানা অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। সময় এসেছে এই কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করতে হবে।
এসময় মাঠে থাকা সাদুল্লাপুর সরকারি ডিগ্রী কলেজের সহকারি অধ্যাপক মাহমদুল হক মিলন জানান, প্রশাসনের হটকারিতায় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানটির সার্বজনীয়তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এতে অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া উপস্থিত সকলে প্রতিবাদ করেন। যদিও পরবর্তীতে উপস্থিত সবার অংশগ্রহণে দ্বিতীয়বার জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়।
এদিকে, এবার বর্ষবরণ উদযাপনে উপজেলা প্রশাসনের সংকোচিত অনুষ্ঠানের আয়োজন ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক দলের নেতা ও সুধিমহলসহ অনেকেই। বর্ষবরণ উপলক্ষে কোন আলোচনা সভা রাখা হয়নি। শুধু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা আর অডিটরিয়াম হল রুমে নামমাত্র একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে বর্ষবরণ উৎসবের তাৎপর্য ও অনুষ্ঠান উপভোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে শতশত শিক্ষার্থী ও তরুণ প্রজন্ম।
যদিও বরাদ্দকৃত অর্থের স্বল্পতা দোহাই দিয়ে সংকোচিত বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন। অথচ প্রশাসনের কর্মকর্তা -কর্মচারীরা বরাদ্দের অর্থ ব্যয়ে নিজেদের জন্য পোশাক-পরিচ্ছেদ (পাঞ্জাবী, গামছা) ক্রয় করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সাদুল্লাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাজী মোহাম্মদ অনিক ইসলাম এ বিষয়ে সাংবাদিকে বলেন, মাঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের বিষয়টি নিয়ে ভুলবোঝাবুঝি হলেও তাৎক্ষণিক তা সমাধান হয়েছে। পরে উপস্থিত সকলে মিলে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। বাজেট স্বল্পতার কারণে সীমিত পরিসরে বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বরাদ্দের অর্থ অনুষ্ঠানের আয়োজনেই ব্যয় করা হয়েছে।
উল্লেখ্য,সাদুল্লাপুরে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে নববর্ষের অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতার মাইকে বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।