মঙ্গলবার 29 এপ্রিল 2025

lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৫
Last Updated 2025-04-15T10:06:46Z
অন্য খবর

ঠাকুরগাঁওয়ে বেলীর অভাবের সংসারে আলো হয়ে এলো ফুটফুটে ছেলে !

Advertisement
 

মোঃ মজিবর রহমান শেখ, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি:

স্বামী বাকপ্রতিবন্ধী, তাই কাজে নিতে চান না কেউ ! কখনও কাজ মেলে কখনও মেলে না। বেলী আক্তারের সংসারে তাই অভাব। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে। এই অভাবের সংসারে নববর্ষের ভোরে আলো হয়ে এসেছে নতুন মুখ। ফুটফুটে ছেলে সন্তান জন্ম দিয়েছেন তিনি। তবে আনন্দের এই সময়ও বেলীর মনে দুশ্চিন্তা! স্বামী সোহেল রানা কাজের সন্ধানে তখন অনেক দূরে, সিলেটে। অন্যদিকে, গত  সোমবার মারা গেছেন তার মা। সোমবার ভোর ৫ টায় ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে ছেলে সন্তান জন্ম দেন বেলী। হাসপাতালে তখন চিকিৎসক ছিলেন না। আয়াদের চেষ্টায় তার 'নরমাল ডেলিভারি' হয়। ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সোহেল ও বেলীর বিয়ে হয়। সোহেলের বাড়ি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কিসমত চামেশ্বরী গ্রামে। আর বেলীর বাড়ি একই উপজেলার রাজগাঁও গ্রামে। 

রোববার রাত ২ টার দিকে বেলীর প্রসব ব্যথা ওঠে। দ্রুত তাকে ঠাকুরগাঁও হাসপাতালে নেন স্বজনরা। তারা জানান, হাসপাতালে তখন চিকিৎসক ছিলেন না। আয়াদের চেষ্টায় বেলীর নরমাল ডেলিভারি হয়।

বেলী-সোহেল দম্পতির এটি প্রথম সন্তান। স্বজনরা জানান, দিনমজুরী দিতে দেশের এ প্রান্তে যান বাকপ্রতিবন্ধী সোহেল। এখন রয়েছেন সিলেটে। তাই প্রথম সন্তানের জন্মের সময় স্ত্রীর পাশে থাকতে পারেননি। তবে আরেকজনের মোবাইলে ভিডিও কলে ছেলের মুখ দেখে খুশিতে কান্না করে ফেলেছেন। সোহেলের ছোটভাই মিন্টু জানিয়েছেন একথা।

হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বেলীর চোখে মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। মুখে হাসি নেই। শারীরও বেশ দুর্বল। বেলী জানান, এই সময় স্বামী পাশে না থাকায় তার খারাপ লাগছে। তাছাড়া কয়েকদিন আগে তার মা মারা গেছেন। কষ্ট লাগছে, নাতির মুখ তিনি দেখে যেতে পারলেন না। বেলী আক্তার বলেন, 'কিছু খেতে মন চাইলেও টাকার অভাবে খেতে পারিনি। দুই বেলা ভাতই ঠিকমতো জোটে না!' তবে বাচ্চাকে অভাব বুঝতে দেবেন না বলে জানান তিনি। বেলী বলেন, 'ছেলেকে পড়ালেখা করাব, ডাক্তার বানাবো। আমার অভাবের সংসারে সেই এখন আলো।’ সোহেল রানার বাবা খাদেমুল ইসলাম বলেন, 'জন্মের পর থেকে সোহেল কথা বলতে পারে না। সংসারে অভাব থাকায় ছোট থেকে অন্যের বাড়িতে কাজ করে। এলাকায় কাজ না থাকলে অন্য জেলায় যায়।' তিনি বলেন, 'বছরের প্রথম দিনে নাতিকে কোলে নিয়ে আনন্দ লাগছে। সোহেল ভিডিও কলে ছেলেকে দেখেছে। বাড়িতে থাকলে অনেক খুশি হতো।' নাতির জন্য সবার কাছে দোয়া চান সোহেলের মা সালেহা বেগম।  বেলীর দাদী ফাতেমা বেওয়া বলেন, ‘চার ভাই-বোনের মধ্যে বেলী সবার ছোট। আমার নাতনির ছেলে হওয়ায় আমরা খুব খুশি। কয়েকদিন আগে বেলীর মা মারা যাওয়ায় আমি এখন তার বাড়িতে আছি, দেখাশুনা করছি।’

ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার রকিবুল আলম চয়ন জানান, ১৪ এপ্রিল সোমবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বেলী আক্তার ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। মা-ছেলে এখন সুস্থ রয়েছে। বাংলা বছরের প্রথম দিনে সন্তানের মা হওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বেলী আক্তারকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে বলে জানান তিনি।