lisensi

Advertisement

Picsart-23-09-20-19-46-51-668
বাংলাদেশ প্রকাশ
বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৫
Last Updated 2025-04-10T09:23:25Z
আইন ও অপরাধ

মৌলভীবাজারের আইনজীবী সুজন হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৫

Advertisement


 


ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার:

মৌলভীবাজার জেলা জজ আদালতের আইনজীবী সুজন মিয়া হত্যা ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী ও ৪ জন ভাড়াটে খুনিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সকালে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ সুপার এম. কে. এইচ. জাহাঙ্গীর হোসেন।

পুলিশ সুপারের কনফারেন্স রুমে প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ‘গত ৬ এপ্রিল রাত ১০টা ৫০ ঘটিকার সময় মৌলভীবাজার পৌরসভার পশ্চিম পাশে প্রধান সড়ক সংলগ্ন ভাসমান তামান্না ফুসকা ও চটপটির দোকানের পাশে ফুটপাতের উপর আইনজীবি সুমন মিয়াকে অজ্ঞাতনামা কয়েকজন মিলে ধারালো চাকু দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে হত্যা করে। উক্ত ঘটনার বিষয়ে মৃত আইনজীবীর ভাই এনামুল হক সুমন বাদি হয়ে মৌলভীবাজার সদর মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

মামলা দায়েরর পর মামলা পুলিশ সুপারের দিক নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) নোবেল চাকমার নেতৃত্বে মৌলভীবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী মো. মাহবুবুর রহমান, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মিনহাজ উদ্দিন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) সামছুল ইসলামসহ একটি বিশেষ দল এলাকার বিভিন্ন সিসি ফুটেজ সংগ্রহপূর্বক পর্যালোচনা এবং তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় বুধবার (৯ এপ্রিল) রাতে অভিযান চালিয়ে হত্যা ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী উপজেলার বাসুদেবশ্রী (কালিশপুর) গ্রামের সামছুল হকের ছেলে নজির মিয়া ওরফে মুজিবকে (২৫) কে আটক করা হয়। তার কাছ থেকে হত্যা ঘটনার কাজে ব্যবহৃত মোবাইল ফোন উদ্ধার করে জব্দ করা হয়। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নজির মিয়া মুজিব এ হত্যা ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততা স্বীকার করে এবং কন্ট্রাক্ট কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া বাকি খুনিদের নাম ঠিকানা পুলিশকে জানায়। পরে পুলিশ মৌলভীবাজারের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে উপজেলার রঘুনন্দনপুর গ্রামের মৃত সিজিল মিয়ার ছেলে মো. আরিফ মিয়া (২৭), দিশালোক ইটা সিংকাপন গ্রামের আনসার মিয়ার ছেলে হোসাইন আহমদ সোহান (১৯), রাজনগর উপজেলার মাথিউড়া চা বাগানের মনা নাইডুর ছেলে লক্ষন নাইডু (২৩) এবং নেক্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কাশিপুর পূর্বপাড়া গ্রামের (বর্তমানে মৌলভীবাজারের মল্লিকসরাই এলাকার জসিম মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া) মো. রফিকুল ইসলামের ছেলে আব্দুর রহিমকে (১৯) গ্রেপ্তার করে। 

গ্রেপ্তারকৃতদের উদ্ধৃতি দিয়ে পুলিশ জানায়, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বাসুদেবশ্রী (কালিশপুর) গ্রামের নজির মিয়া ওরফে মুজিবের সাথে তার প্রতিবেশী অগ্রণী ব্যাংকের নিরাপত্তা প্রহরী মিসবাহের পূর্ব হতে নানা বিষয়ে শত্রæতা ছিল। এর জের ধরে নজির মিয়া (মুজিব) দীর্ঘদিন ধরে মিসবাহকে শায়েস্তা করতে পরিকল্পনা করে। গত দুই বছর পূর্বে আসামি নজির মিয়া (মুজিব) শহরতলীর চাঁদনীঘাট এলাকার একটি হোটেলে কাজ করাকালীন সময়ে ওই হোটেলে দুধ সরবরাহকারী লক্ষন নাইডুর সাথে তার পরিচয় হয়। লক্ষনের মাধ্যমে মিসবাহকে মারার জন্য টাকার বিনিময়ে লোক ভাড়া করে নজির মিয়া মুজিব। এরপর নজির মিয়া মুজিব ভাড়াটিয়া দুষ্কৃতিকারী এবং লক্ষনের নিকট তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকে ইমোর মাধ্যমে টার্গেটের ছবি (মিসবাহ) পাঠায়। ঘটনার দিন অর্থাৎ ৬ এপ্রিল বাণিজ্যমেলার মাঠে ভাড়াটিয়া দুষ্কৃতিকারীরা ভিকটিম সুজনকে দেখে মিসবাহ ভেবে নজির মিয়া মুজিবকে কল দিয়ে বলে, যে লোকের ছবি পাঠিয়েছ সেই লোককে আমরা পেয়েছি। নজির মিয়া মুজিব ভাড়াটিয়া দুষ্কৃতিকারীদের ভিডিও কলের মাধ্যমে টার্গেট দেখিয়া নিশ্চিত করতে বলে। দুষ্কৃতিকারী আব্দুর রহিম ইমুতে ভিডিও কল দিয়ে নজির মিয়া মুজিবকে আইনজীবী সুজনকে দেখিয়ে বলে তোমার পাঠানো ছবির সাথে মিল আছে। তখন নজির মিয়া মুজিব দুস্কৃতিকারীদের বলে তাকে মারো। এরইমধ্যে আইনজীবী সুজন মিয়া বাণিজ্যমেলা থেকে বেড়িয়ে পৌরসভার সামনে তামান্না ফুসকা ও চটপটির দোকানের গিয়ে বসেন। রাত অনুমান ১০টা ৫০ ঘটিকায় সেখানে গিয়ে ধৃত আসামীরাসহ আরো ১০/১২ জন আসামী অতর্কিত আক্রমণ করে ধারালো চাকু দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে আইনজীবি সুজন মিয়াকে হত্যা করে। 

মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ সুপার এম. কে. এইচ. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘ঘটনায় জড়িত অন্যান্য আসামীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত আছে। আমরা পলাতক অন্যান্য হত্যাকারীদের পরিচয় উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছি। তবে মামলার তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না। বৃহস্পতিবার দুুপুরের দিকে গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের মৌলভীবাজার আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।